ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশীতা ইসলাম এই আদেশ দেন।
হামলার প্রেক্ষাপট ও ঘটনা
গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে মতিঝিল এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা শেষ করে ফেরার পথে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে হামলার শিকার হন ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্তের মধ্যে পেছনের জন তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
যেভাবে পালিয়ে যান প্রধান আসামি
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী:
- শুটার শনাক্ত: সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মোটরসাইকেলের পেছন থেকে ফয়সাল করিম মাসুদই গুলি চালিয়েছিলেন।
- পালানোর পথ: হামলার পর মাসুদ প্রথমে আগারগাঁওয়ে তার বোনের বাসায় যান। সেখান থেকে মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখসহ সিএনজি অটোরিকশা যোগে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
- সীমান্ত পার: ওই রাতেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। এই পারাপারে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে সহায়তা করেন সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।
নতুন যেসব তথ্য পাওয়া গেছে (Scrapped Info)
১. রাজনৈতিক ও পারিবারিক যোগসূত্র: গ্রেপ্তারকৃত সিবিয়ন দিউ ময়মনসিংহ-১ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য জুয়েল আড়েংয়ের ভাগনে। জুয়েল আড়েং আবার সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত প্রমোদ মানকিনের ছেলে।
২. পাচারকারী সিন্ডিকেট: পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, সিবিয়ন দিউ দীর্ঘদিন ধরে হালুয়াঘাট, ধোবাউরা ও শেরপুর সীমান্ত এলাকায় একটি শক্তিশালী অবৈধ পারাপার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এই সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অপরাধীদের সীমান্ত পার করে দেয়।
৩. পরিকল্পিত হামলা: গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, এটি কেবল তাৎক্ষণিক কোনো হামলা ছিল না। ওসমান হাদির রাজনৈতিক অবস্থান এবং ঢাকা-৮ আসনে তার প্রার্থিতা নিয়ে একটি মহলের অসন্তোষ ছিল। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে ডিবি পুলিশ বর্তমানে অভিযান চালাচ্ছে।
৪. ইনকিলাব মঞ্চের দাবি: ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা অর্থদাতাদের পরিচয় বেরিয়ে আসবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রিমান্ডের উদ্দেশ্য
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে চায় পুলিশ:
- কার নির্দেশে বা কার পরামর্শে আসামিদের সীমান্ত পার করে দেওয়া হয়েছে।
- হামলায় ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস ও অবস্থান।
- এই হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে থাকা পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতাদের শনাক্ত করা।
ডিবি মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন, তবে আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে তিন দিনের অনুমতি দেন।