টাইটানিক দুর্ঘটনায় নিহত অন্যতম ধনী যাত্রী ইসিডর স্ট্রাউসের মরদেহ থেকে উদ্ধার করা একটি ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের পকেট ঘড়ি সম্প্রতি নিলামে রেকর্ড ১৭ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৮.৫ কোটি টাকা) দামে বিক্রি হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই দামের ঘড়ি এই ধরনের সংগ্রহযোগ্য সামগ্রীর মধ্যে রেকর্ড মূল্য ধরে রেখেছে।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল সাউদ্যাম্পটন থেকে নিউইয়র্কগামী টাইটানিক জাহাজে ইসিডর এবং তার স্ত্রী আইডা স্ট্রাউস ভ্রমণের সময় বরফখণ্ডে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যান। ওই ঘটনায় ১৫০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ইসিডরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের সঙ্গে পাওয়া যায় ঘড়িটি, যা চার প্রজন্ম ধরে স্ট্রাউস পরিবারের সংরক্ষণে ছিল।
ঘড়িটি শনিবার ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের ডিভাইজেস শহরের হেনরি অলড্রিজ অ্যান্ড সন নিলাম ঘরে বিক্রি হয়। জার্মানিতে জন্ম নেওয়া ইসিডর স্ট্রাউস ছিলেন মার্কিন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং নিউইয়র্কের মেসিজ ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সহ-মালিক। টাইটানিক ডুবির রাতে আইডা লাইফবোটে উঠতে বললেও স্বামীকে ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, স্বামীর পাশে থেকে মৃত্যুবরণ করবেন। আইডা স্ট্রাউসের মরদেহ আর কখনও পাওয়া যায়নি।
এছাড়া নিলামে বিক্রি হয়েছে টাইটানিকের লেটারহেডে লেখা আইডা স্ট্রাউসের চিঠি ১ লাখ পাউন্ডে, যাত্রী তালিকা ১ লাখ ৪ হাজার পাউন্ডে এবং আরএমএস কারপাথিয়ার নাবিকদের দেওয়া স্বর্ণপদক ৮৬ হাজার পাউন্ডে। সব মিলিয়ে টাইটানিক-সংক্রান্ত স্মারকের নিলামে মোট প্রায় ৩০ লাখ পাউন্ড সংগ্রহ হয়েছে।
নিলামকারী অ্যান্ড্রু অলড্রিজ জানিয়েছেন, ঘড়িটির রেকর্ডমূল্য টাইটানিকের প্রতি মানুষের দীর্ঘস্থায়ী আগ্রহেরই প্রমাণ। তিনি বলেন, টাইটানিকের প্রতিটি যাত্রী ও নাবিকের নিজস্ব গল্প ছিল, আর ১১৩ বছর পরও সেই গল্পগুলো স্মারকের মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে।
তিনি আরও যোগ করেন, স্ট্রাউস দম্পতি ছিলেন টাইটানিকের চূড়ান্ত প্রেমের গল্পের প্রতীক। ৪১ বছরের দাম্পত্যের পরও আইডা স্বামীর পাশে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন— ঘড়ির এই রেকর্ডমূল্য সেই সম্মানেরই প্রতিফলন।