রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। আর চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন— বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
রায়ে আপিল বিভাগ স্পষ্ট করেছেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হবে। তবে চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দিয়েছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক। একই ইস্যুতে বিএনপি, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকজন পৃথক রিভিউ আবেদন করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নতুন করে আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ।
দশ কার্যদিবস ধরে শুনানি শেষে ১১ নভেম্বর আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন।
বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন ড. শরীফ ভুইয়া; বিএনপির পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল; মির্জা ফখরুলের পক্ষে ব্যারিস্টার জয়নুল আবেদীন এবং জামায়াতের পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করে। পরে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হলে ২০০৪ সালে রিট খারিজ হয়ে ব্যবস্থা বহাল থাকে। ২০০৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০০৬ সালের রাজনৈতিক সংকট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের প্রশাসন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়। অ্যামিকাস কিউরির অধিকাংশই কেয়ারটেকার ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন, তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই অবস্থান নেন।
২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই জাতীয় সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে এবং ৩ জুলাই তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করেন। ফলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরার পথ তৈরি হয়, যার চূড়ান্ত রায় আজ আপিল বিভাগ ঘোষণা করল।