ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শুরু হয়েছে। সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন। নির্বাচন কমিশনাররা আচরণবিধি মানা, নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর ভূমিকা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রথম সেশন শেষে সিইসি জানান, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, অতীতের তুলনায় এবার সংলাপ শুরুতে দেরি হলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ভোটদানের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।নির্বাচন কমিশনার আনওয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো কম্প্রোমাইজ করবে না। আচরণবিধি পরিপন্থি যেকোনো কাজের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচনের সময় আমাদের অবজারভেশন টিম থাকবে। এ ছাড়া সাংবিধানিকভাবে বলা আছে যে, দ্বৈত নাগরিক নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন না তবে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমেদ বলেন, এককভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবে না। আমরা সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবো। অনেক সময় কেন্দ্র দখল হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে সর্বদলীয় কেন্দ্র রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রতিটি আসনে একই মঞ্চে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের একই সঙ্গে তাদের ইশতেহার ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে ইসি ব্যবস্থা নেবে। সেই সাথে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও কলেজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে এবং হারানো অস্ত্রের মধ্যে ৮১% উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনে আলাদা সেল গঠন করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মূল প্রস্তাবনা
সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। ৫ আগস্ট লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে। ১৮ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের তাগিদ দেয় দলটি।
বিকল্পধারা অভিযোগ করে বাংলাদেশে বড় দুটি দল আচরণবিধি মানে না। তাদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। কোনো দলের এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে থাকতে না দেওয়ার বিধান আচরণবিধিতে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করেছে দলটি। ইসির ক্ষমতা বাস্তবায়নের জোর দাবির পাশাপাশি পোষ্টাল ব্যালটের ভোটার তালিকা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করারও দাবি বিকল্পধারার।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি জানায়, আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে গণমাধ্যমের সহযোগিতা এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের এজেন্টদের জন্য ভোটের আগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ফেক চেকিং ও এআই ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল দাবি জানিয়েছে, প্রার্থী নমিনেশন পেপার সাবমিট করার পর নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা দিতে হবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, অবৈধ ও কালো টাকার ব্যবহার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার রোধ করার দাবি জানিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট জানায়, সকল প্রার্থীকে একই মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা করার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়াতে স্বরাষ্ট্র এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি ইসির অধীনে আনতে হবে। সেই সাথে দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ আরপিওতে সংযুক্ত করার পাশাপাশি যানবাহনে নির্বাচনী প্রচারণা বা শোডাউন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে দলটি।